কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, কোলেস্টেরল রোগ মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাদ্য খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা করব। মূলত খাদ্য পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভাবে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে আনে। এবং কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কোলেস্টেরলকে দুই ভাগ করে নাম দিয়েছেন। একটা হচ্ছে ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন এবং এলডিএল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি একটি খারাপ কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। তাই চলুন এই পোস্টের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায় গুলো জেনে নিন। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার অনেক উপকারে আসবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায়  সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভূমিকা

কোলেস্টেরল কমানোর জন্য খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। যার ফলে খুব সহজেই কোলেস্টেরল কমানো যেতে পারে। কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে যেসব বিষয়ে আলোচনা করব তা হল-কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা, কোলেস্টেরল কমাতে লেবু, দ্রুত কোলেস্টেরল কমানোর উপায়, কোলেস্টেরল কমানোর ব্যায়াম, কোলেস্টেরল লক্ষণ, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, এই সকল বিষয়েই এই পোস্টটির মধ্যে তুলে ধরা হলো।

কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা

কোলেস্টেরল কমানোর জন্য বিভিন্ন খাদ্য রয়েছে এবং একমাত্র খাদ্যই কোলেস্টেরল রোগের চিকিৎসা পাশাপাশি সমাধান। কোলেস্টেরল কমানোর জন্য অবশ্যই কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম রাখতে হবে।কোলেস্টেরল কমানোর জন্য খাওয়ার তালিকায় বার্লি, ভুট্টা এগুলা বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। শরীরের নেগেটিভ কোলেস্টেরল দূর করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন খাদ্য খেতে পারেন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য যে সকল খাদ্য খেতে পারেন যেমন-কমলা, স্ট্রবেরি, আপেল, পেয়ারা, কুমড়া, গাজর, বাঁধাকপি, ব্রকলি, পেঁপে, কলা, তরমুজ এই সকল খাদ্যগুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে। তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ভিটামিন শরীরে যুক্ত হবে। অথবা বাদাম জাতীয় খাদ্য খেতে পারেন, বাদাম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অথবা কমাতে বেশ কার্যকারী উপাদান রয়েছে।

কোলেস্টেরল কমানোর জন্য রসুন অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন নিয়মিত এক থেকে দুই কোয়া রসুন খেলে কোলেস্টেরল অতি সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বেশি পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়া উচিত এবং ফলমূল খাবার তালিকায় রাখতে হবে। কারণ সবুজ শাক-সবজি শরীরের জন্য বেশ কার্যকারী এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সকল খাদ্যগুলো খাবার তালিকায় অবশ্যই রাখবেন যেমন-পুঁইশাক-পালং শাক-কলমি শাক-মেথি-কচু-এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার তালিকায় শাক রাখতে পারেন। এতে খুব সহজেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। খাবার তালিকায় ডিম খেতে পারেন তবে নিয়ম করে খেতে হবে। তবে চেষ্টা করুন ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশটি খাওয়ার।

কোলেস্টেরল কমাতে লেবু

এখন বর্তমানে ঘরে ঘরেই দেখা যাচ্ছে কোলেস্টেরল রোগীর সংখ্যা। এই কোলেস্টেরলের জন্য শরীরে বিভিন্ন ধরনের খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে শরীরে। কোলেস্টরেলের সমস্যা দেখা দিলে অথবা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে ভিটামিন সি। আমাদের অনেকেরই চেনা ভিটামিন সি ফল কমলা লেবু এবং লেবু, আপনি যদি নিয়মিত লেবুর রস খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই রক্তের কোলেস্টেরল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়।

এছাড়াও লেবুতে রয়েছে ফাইবার এর জন্য হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে লেবুতে। লেবুতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি এবং ফাইবার সমূহ উপাদান থাকায়, কোলেস্টেরলের পাশাপাশি স্টোকের ও ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি লেবুর রস নিয়মিত খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের সম্পূর্ণ মাত্রায় কমে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রতিদিন নিয়মিত ২৪ গ্রাম লেবুর রস খেলে রক্তের সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

দ্রুত কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

কোলেস্টেরল দ্রুত কমানোর জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে তার ভিতরে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাদ্য খাবার খাওয়া যাবে না। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে খুব সহজেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। এখন কোলেস্টেরল কমবেশি সব পরিবারেই দেখা দিচ্ছে। তার মানে এই নয় যে কোলেস্টেরল খারাপ। কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ভালো ও বলা হয়েছে।

কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হতে পারে যেসব কারণে। যেমন- ফ্যাট যুক্ত খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম না করার কারণ, সব সময় শুয়ে বসে থাকা বা পরিশ্রম না করার কারণ, এছাড়াও অ্যালকোহল খাওয়ার কারণে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হতে পারে। এবং আপনি চাইলেই দ্রুত করার কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করতে পারেন। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবেও দ্রুত কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।

গবেষণায় বলা হয়েছে কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে তাহলে তার হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করুন তাহলে খুব সহজেই কোলেস্টেরলের সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। পাশাপাশি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন ওজন বৃদ্ধির জন্য কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এবং ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্রুত কোলেস্টেরল কমানোর জন্য অবশ্যই ব্যায়াম করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।

কোলেস্টেরল কমানোর ব্যায়াম

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে এক্সারসাইজের। কারণ কোলেস্টেরল পরিশ্রম এবং ব্যায়ামের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শরীরে ওজনের মাত্রা বেশি হলে খুব সহজেই কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এর জন্য কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিশ্রম করুন অথবা নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

মানবদেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে একটি এলডিএল কোলেস্টেরল অপরটি এইচডিএল কোলেস্টেরল, এলডিএল কোলেস্টেরল হচ্ছে খারাপ এবং এইচ ডি এল কোলেস্টেরলটি ভালো। খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলটি দমন করতে নিয়মিত ব্যায়াম করলেই নিয়ন্ত্রণে থাকতে সক্ষম হয়। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত সকাল সন্ধ্যা হাঁটতে পারেন। আপনি যদি ৩০ মিনিট এবং তারও বেশি হাঁটাহাঁটি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আসবে।

অথবা সাইকেল নিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বেড়াতে পারেন। গবেষণায় জানা গেছে নিয়মিত কেউ যদি সাইকেল চালায় তাহলে কোলেস্টেরলে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশঙ্কা কমে যায়। সাইকেল চালানো হার্টের জন্যও বেশ উপকারী, তাই নিয়মিত সাইকেল প্যান্ডেলিং করার অভ্যাস করুন।

কোলেস্টেরল লক্ষণ

কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোলেস্টেরল বেশি রক্তের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে থাকে, এবং কোলেস্টেরল হলে রক্তের নালী গুলোকে ব্লক করে দেয়। কোলেস্টেরলের লক্ষণ অথবা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হলে যে উপসর্গগুলো দেখা যায়। যেমন-ক্লান্ত ভাব, শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি। এবং এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে চোখের আশেপাশে সাদা ভাব দেখা যায়। চোখের আশেপাশে যদি এমন কিছু লক্ষণ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। আবার কোলেস্টেরল বৃদ্ধির জন্য চোখের পাতা হলুদ রং দাগ হতে পারে। কোলেস্টেরলের জন্য বিভিন্ন সময় পায়ে ব্যথা অনুভব করতে পারে, এবং বুকে ব্যথা এইসব লক্ষণ দেখা যায়। এ সকল সমস্যা গুলো দেখা দিলেই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ

যদি কোলেস্টেরল অতিরক্ত বৃদ্ধি পায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করুন। এবং এলডিএল কোলেস্টেরল উপসর্গ যদি দেখা দেয় অতিরক্ত পরিমাণে তাহলে অবশ্যই ঔষধ সেবন করতে হবে। বিভিন্ন ফার্মেসিতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ধরনের ঔষধ পেয়ে যাবেন। তবে আমি আপনাকে একটি ওষুধের নাম বলছি (Statin Drug) এই ওষুধটি কোলেস্টেরল দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

তবে একটি কথা মনে রাখবেন যদি আপনার শরীরে কোলেস্টেরল উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঔষধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি কোলেস্টেরল কমানোর জন্য কোন ধরনের ঔষধ খেয়ে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায় তাহলে অবশ্যই সে ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করে দিন।

কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায়-শেষ কথা

কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির জন্য নানা ধরনের উপায় রয়েছে। যেমন-স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমূহ খাদ্য পরিত্যাগ করা, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা। এইসব গুলো ঠিকমত পালন করলে কোলেস্টেরল থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাবেন। আশা করছি কোলেস্টেরল কমানোর প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানাতে পেরেছি। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url