পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গুলো জেনে নিন

 

প্রিয় বন্ধুরা, আজকে আমি পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গুলো বিষয়ে বিশেষ আলোচনা করব। অনেকেই রয়েছে মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়দের সঙ্গে কথা বলতে চান কিন্তু সাক্ষাতে প্র্যাকটিক্যাল ভাবে তেমন কথা বলতে পারেন না। পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি এই সকল বিষয়েই মূলত চাষিরা বেশি জানতে আগ্রহ হয়ে থাকে। এর জন্যই এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গুলো বিস্তারিত আলোচনা করব।
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। তবে আমরা সবচেয়ে যেটা ভালো হবে এবং মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো উপযোগী মনে হবে এইসব বিষয়েই আলোচনা করব। এবং এই পোস্টটির মাধ্যমে পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি বিষয়ে সঠিক তথ্য দিব। বন্ধুরা তাই দেরি না করে চলুন আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গুলো জেনে নিন

ভূমিকা

অনেকেই ব্যবসার জন্য এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে থাকেন এবং ভেবে পান না কি ব্যবসা করলে ভালো হবে। ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য মাছ চাষ একটি অন্যতম ব্যবসা বললেই চলে। তাই আমরা আজকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করব এবং জেনে নেন কি কি বিষয়ে আলোচনা করব। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, মাছ চাষের ট্রেনিং, মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি, মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি, কোন মাছ চাষে লাভ বেশি, শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম, এই সকল বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব।

আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

মাছ সুষম খাদ্য। এবং চাষিরা মাছ চাষে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এবং আধুনিক পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে চাষিরা মাছ চাষে লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। কিছুদিন আগে মাছ চাষের প্রতি চাষিরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ শুধু পুকুরে মাছ চাষ করে তারা লাভবান হতে পারছিলেন না। তবে এখন বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষের জন্য পদ্ধতি রয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গাতে পদ্ধতি গুলা ব্যবহার করে মাছ চাষীরা বেশ লাভবান হচ্ছে।
আধুনিক পদ্ধতিতে নানা ধরনের মাছ চাষ করা হচ্ছে। এর ফলে চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন, এবং পাশাপাশি আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য ভালো একটি পুকুর নির্বাচন করে চাষিরা যেসব মাছগুলো চাষ করছেন, শিং মাছ, মাগুর মাছ, গলদা চিংড়ি, টেংরা, পাবদা এবং আরো দেশি মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করছেন।

চাষিরা মৎস্য বিভাগ থেকে ট্রেনিং নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন বলে জানা গেছে। এবং পাশাপাশি মাছ চাষীদের সংখ্যাও বেড়ে উঠছে এবং দেশের বেকারত্ব চাহিদা কমছে। মৎস্য বিভাগ থেকে চাষীদের পোনা ও খাদ্য নির্বাচন করে দিচ্ছেন এবং পাশাপাশি তারা চাষীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।

মাছ চাষের ট্রেনিং

অনেকেই মনে মনে ভাবেন যে একটি ব্যবসা করব। এবং মাথার ভেতরে নানা ধরনের ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা ঘুরপাক করে। কিন্তু সঠিক ভাবে কোন ব্যবসাটি করা যায় সেই সম্পর্কে কেউ বুঝে উঠতে পারে না। এবং সহজ ব্যবসার জন্য মৎস্য চাষ একটি অন্যতম ব্যবসা। এর জন্য অনেক তরুণ তরুণী রয়েছে যে যদি মাছ চাষের ট্রেনিং করে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারি তাহলে আমাদের জন্য খুব উপকার হবে এরকম প্রশ্ন নেই অনেকেই ঘোরাঘুরি করে।

তবে এর জন্য মৎস্য বিভাগ মাছ চাষীদের ট্রেনিং দিয়ে থাকে। তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে পারলেই চাষীদের অবশ্যই মৎস্য বিভাগ থেকে সাহায্য করে থাকেন। মাছ চাষের জন্য যে সকল মাছ চাষ করার পদ্ধতি গুলা তারা দেয় এবং মাছ চাষের ট্রেনিং করানো হয় সেগুলো বিষয়ে কয়েকটি পয়েন্ট বলে দেব।
মৎস্য বিভাগ থেকে আপনাদেরকে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষের পদ্ধতি এবং ট্রেনিং দিয়ে থাকেন। এবং এইসব ট্রেনিং করে এখন যুবক-যুবতীরা মৎস্য চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। আপনাকে কি কি বিষয়ে মাছ চাষের ট্রেনিং করানো হবে নিজে জেনে নিন।
  • তেলাপিয়া মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা।
  • চিংড়ি মাছের উন্নত চাষের ব্যবস্থাপনা।
  • দেশি জাতের মাছ চাষ প্রশিক্ষণ।
  • খাঁচায় কিভাবে মাছ মাছ চাষ করা হয় এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
  • মাছ চাষের রোগ বালাই প্রতিকার প্রশিক্ষণ।
  • মৎস্য খাদ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
  • মাছের রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার ব্যবস্থাপনা।
  • কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সহযোগিতা জন্য প্রশিক্ষণ।
  • শিং মাছ, কৈ মাছ, মাগুর মাছ বিষয়ক প্রশিক্ষণ।

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

অনেকের গ্রামে ছোটখাটো একটি পুকুর থাকেই। তবে সেই পুকুরটা কাজে লাগিয়ে যদি ব্যবসা করা যায় তাহলে কেমন হয়। এর জন্য আপনাদের অবশ্যই মাছ চাষের জন্য পুকুরটি প্রস্তুতি করা লাগবে। কারণ মাছ চাষ অপরিষ্কার জায়গায় করা যায় না এতে মাছের নানা ধরনের রোগ ব্যাধি হয়। এবং মাছ বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই পুকুরটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। এতে করে দ্রুত মাছ বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি চাষীরা লাভবান হবেন।

প্রথমতঃ মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি করার জন্য পানিতে যেসব নোংরা আবর্জনা সকল নোংরা তুলে ফেলতে হবে। এবং কচুরিপানা, কলমি লতা, গাছের পাতা বা নানা ধরনের নোংরা আবর্জনা পুকুরে থাকতে পারে এগুলো সব কিছুই তুলে ফেলতে হবে। এবং উপরে কীটনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে করে মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকারী হবে।

দ্বিতীয়তঃ পানি পরিষ্কার করার জন্য শতকে এক কেজি চুন কোন বালতি বা পাতিলে করে কিছুটা পানি দিয়ে চুন মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এবং দুই তিন দিনের ভেতরে পানি একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।

তৃতীয়তঃ কাদামাটি শক্ত করার জন্য চুন দেওয়ার কিছুদিন পর ইউরিয়া সার, টিএসপি এবং জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শুটকি মাছের নাম
চতুর্থতঃ পানি পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। এবং পানি যদি সঠিক মাপে থাকে তাহলে মাছের পোনা ছাড়ার জন্য উপযোগী হয়ে যাবে। এবং যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকে তাহলে অবশ্যই নতুন করে পানি উপরে ঢুকাতে পারেন অথবা বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি পুকুরে বেঁধে নিতে পারেন।

পঞ্চমতঃ সঠিক মাপের পোনা নির্বাচন করা। এবং ভালো জাতের পোনা পুকুরে ছাড়া। মাছের গ্রোথ ও তাড়াতাড়ি ওজন বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে মাছের পোনা সঠিকভাবে নির্বাচন করা। তাই সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রেখে মাছের পোনা নির্বাচন করুন।

মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি

মিশ্র চাষের জন্য লাভবান জনক কিছু মাছ রয়েছে। মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি বর্তমানে যে সকল মাছগুলো বেশি চাষিরা চাষাবাদ করে থাকেন এবং লাভবান জনক হচ্ছেন এ বিষয়েই মাছের নাম গুলো বলবো এবং এই সকল মাছগুলো বাজারে ব্যাপক পরিমাণে চাহিদা রয়েছে। আপনি রুই, কাতলা, সিলভার কাপ, সারফিং মাছ ইত্যাদি এই সকল মাছগুলো চাষ করতে পারেন।

আপনি মাছ চাষে লাভবান হওয়ার জন্য মাছ চাষ পদ্ধতি ভেতরে খাদ্যটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কম খরচে মাছ বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করতে পারেন। যেমন খাদ্য মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি প্রাকৃতিক আরেকটি সম্পূরক খাদ্য।

প্রাকৃতিক খাদ্য-পুকুরের পানিতে অনেক সময় বর্ষাকালে কচুরি পানা হয়ে থাকে এবং শ্যাওলা এই সকল খাদ্যগুলো হল প্রাকৃতিক খাদ্য। তবে এদিকে খেয়াল রাখবেন শ্যাওলা অথবা কচুরিপানা এগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে যেন না হয়। যদি অতিরিক্ত পরিমাণে শ্যাওলা, কচুরিপানা জন্ম নেয় তাহলে অবশ্যই কীটনাশক ব্যবহার করে তার দমন করতে হবে।

সম্পূরক খাদ্য-সম্পূরক খাদ্যের জন্য আপনি সরিষার খোল, ভুট্টা ভাঙ্গা, চালের গুড়া, এই সকল খাদ্য মিশ্রিত করে পুকুরে ছিটিয়ে দেওয়া। এবং মাসে এক থেকে দুইবার জাল টেনে মাছের ওজন বৃদ্ধির জন্য পরীক্ষা করা। এবং মাছ সুস্থ আছে কিনা তা নির্বাচন করা।

কোন মাছ চাষে লাভ বেশি

আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করা হয়। তবে দেশি মাছ সবচেয়ে লাভজনক চাষ। সঠিক পদ্ধতিতে দেশী মাছ চাষ করলে অবশ্যই আপনি লাভবান হবেন। এবং আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের দেশি মাছ রয়েছে যার বাজার মূল্য অনেক চওড়া। আর এর জন্য দেশী মাছের বেশি চাহিদা রয়েছে। এর ফলে চাষিরা দেশি মাছের চাষ করার জন্য চাষীরা প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
আমি আপনাদেরকে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি এবং কি কি মাছ চাষ করলে আপনি লাভবান হবেন এই বিষয়ে কিছু কিছু মাছের নাম বলবো। এবং অবশ্যই আপনি এই সব মাছগুলো চাষাবাদ করলেন লাভবান হবেন এবং এই সকল মাছগুলো সারা বছরই চাহিদা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। তো চলুন জেনে নেই কি কি মাছ চাষ করলে বেশি লাভবান হবেন।

১. গলদা চিংড়ি।
২. রুই মাছ।
৩. টেংরা মাছ।
৪. শিং মাছ।
৫. কাতল মাছ।
৬. সিলভার কাপ মাছ।
৭. পাঙ্গাস মাছ।
৮. কৈ মাছ।
৯. তেলাপিয়া মাছ।
১০. পাবদা মাছ।
১১. গুলশা মাছ।
১২. গ্লাস কাপ মাছ।

এইসব মাছ ঐতিহ্যবাহী মাছ এ সকল মাছ লাভজনক এবং দ্রুত বৃদ্ধি হতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি এ সকল মাছগুলোর বাজারজাত বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। এবং সারা বছর এই মাছগুলোর বাজারে প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে। এবং এ মাছগুলোর দাম আস্তে আস্তে বাড়ন্ত অবস্থায় রয়েছে। তাই অবশ্যই এই মাছগুলো চাষ করলে আপনি লাভবান হবেন এবং পাশাপাশি মানব দেহের আমিষের চাহিদা খুব সহজেই পূরণ হবে।

শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন মাছ চাষ করার জন্য কত শতক প্রতিমাস ছাড়া যায়। তাই আমি আপনাদেরকে শতকপ্রতিমা ছাড়ার নিয়ম গুলো সঠিকভাবে জানিয়ে দেব। পোনা ছাড়ার আগে ভালোমতো পুকুরটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। এবং প্রতি শতকে ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের মাছ আপনি ১৫০-২৫০ টি পুকুরে ছাড়তে পারেন। এবং বড় মাছের জন্য আরও কম মাছ ছাড়বেন। কারণ ঘনত্ব বাড়লে মাছ বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে।

আমাদের শেষ কথা

বুঝেশুনে পুকুর নির্বাচন করুন। এবং খেয়াল রাখুন পুকুরে যেন সবসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে। এবং মাসে দুই থেকে তিনবার জাল টেনে মাছ দেখতে পারেন। এবং মাছের কোন ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই মৎস্য বিভাগের সাহায্য নিবেন এবং তাদেরকে সবকিছু বিস্তারিত জানিয়ে দেবেন। আশা করি পুকুর বিষয়ে আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পেরেছি। এবং কোন মাছে লাভ বেশি এই সকল বিষয়েই আপনি এতক্ষণে জেনে গেছেন।

আপনি যদি মাছ চাষের জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই উপরে দেওয়া তালিকা গুলো অনুযায়ী আপনি মাছ চাষের জন্য উদ্যোগ নিতে পারেন। এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের শেয়ার করুন এবং আমাদেরকে নিচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url