মাছের ভাসমান খাবার তৈরির উপকরণ-মাছের খাবার তৈরির উপকরণ
মাছের খাদ্যর জন্য সবাই জানতে চান এবং ছোটখাটো পুকুরে মাছ চাষের জন্য অনেকেই
আগ্রহী হয়ে ওঠে। এর জন্যই এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে মাছের ভাসমান খাবার তৈরীর
উপকরণ মাছের খাবার তৈরির উপকরণ এইসব বিষয়ে বিশেষ আলোচনা করব। অনেকে রয়েছে ফিড
ছাড়া মাছ চাষ করতে চাই এর জন্য প্রাকৃতিকভাবে অথবা ঘরোয়া ভাবে মাছের খাদ্যের
জন্য উপায় খুঁজেন, এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি মাছের ভাসমান খাবার তৈরি উপকরণ মাছের
খাবার তৈরির উপকরণ এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মাছের গ্রোথ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং পাশাপাশি ফিড ছাড়া মাছের ওজন বৃদ্ধি করা
যায় এই সকল বিষয়েই আলোচনা করব। এবং কিভাবে খাদ্য তৈরি করা হয় এই সকল তথ্য
আপনাদের দিয়ে থাকবো। মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা, কম খরচে মাছের খাবার তৈরি, গোবর
দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি, মাছের পাকৃতিক খাবার তৈরির পদ্ধতি, মাছের ভাসমান খাবার
দাম, তেলাপিয়া মাছ কোন স্তরের খাবার খায়, এই সকল বিষয়েই জানতে এই আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মাছের ভাসমান খাবার তৈরির উপকরণ-মাছের খাবার তৈরির উপকরণ
মাছের খাদ্য তৈরির ফর্মুলা
মাছের খাদ্যের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ভালো একটি ওজন করার জন্য অবশ্যই মাছের
খাদ্য তৈরির ফর্মুলা জানা প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি নিজের হাতে
মাছের খাদ্য তৈরি করেন এবং সেই খাদ্যটি হবে নির্ভেজাল মুক্ত। এবং পাশাপাশি মাছের
শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সক্ষম হবে। আপনি চাইলেই অবশ্যই বাসায় বিভিন্ন রকম
জিনিস দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করতে পারবেন।
মাছের খাদ্য তৈরি করার জন্য বিশেষ কিছু লাগেনা আমাদের বাড়িতেই বিভিন্ন জিনিস আগে
থেকেই থাকে সেগুলোকে ব্যবহার করলেই মাছের খাদ্য তৈরি করা একদম সহজ এই সব বিষয়েই
আমি আলোচনা করব। কেমন খাদ্য বলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং ফিড ছাড়া কিভাবে
মাছের গ্রোথ তৈরি করবেন সবকিছুই আপনি এই পোস্টটির মাধ্যমে জানতে পারবেন।
মাছ যেসব খাবারগুলো পছন্দ করেন এবং আপনি চাইলেই ঘরে বসেই খাদ্য তৈরি করতে পারবেন।
তো চলুন জানি মাছের খাদ্য তৈরি ফর্মুলা গুলো-আপনি সরিষার খৈল, গম বা ধানের ভুসি,
চালের গুড়া, শুটকি মাছের গুঁড়া, সয়াবিনের ভুসি, ভুট্টা ভাঙ্গা এই সকল
উপাদানগুলো ২৪ ঘন্টা মত একসঙ্গে মিশিয়ে রাখতে হবে। এবং এটি খুব সহজেই মাছের
খাদ্য তৈরি হয়ে যাবে আপনি এভাবে খাবার তৈরি করতে পারেন।
কম খরচে মাছের খাবার তৈরি
বর্তমানে বাংলাদেশে মাছের খাদ্য দাম বৃদ্ধি হতেই আছে এর জন্য অনেক চাষী রয়েছে
মাছ চাষ থেকে সরে আসছে। এটি একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে কিন্তু কেনা খাদ্য চেয়ে
আপনি চাইলেই খুব কম খরচেই মাছের খাদ্য তৈরি করতে পারবেন। আমরা প্রাচীনকাল থেকেই
জেনে আসছি মাছ চাষ একটি লাভজনক এবং সহজ ব্যবসা। কিন্তু তিনদিন জিনিসপত্র দাম
বৃদ্ধি হয় মাছের খাদ্য দাম উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে।
মৎস্য চাষিরা অনেকেই ফিডের ওপরে চাহিদা করেই মাছ চাষ করতেন এবং ভালো লাভবান হতেন
কিন্তু হঠাৎ করেই ফিডের দাম বাড়তির জন্য মাছ চাষীরা বিপাকে পড়ে। তাই আমি
আপনাদেরকে একটি সঠিক পদ্ধতিতে কিভাবে খুব কম খরচে মাছের খাবার তৈরি করবেন এই
বিষয়েই কিছু ফর্মুলা দেব। মূলত এই মাছ চাষে অনেক তরুণ তরুণীরা ব্যবসা করছেন এবং
তারা একদম নতুন তাদের মাছের খাদ্য তৈরি করার তেমন একটা জ্ঞান নেই। তাই তাদের
জন্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি।
ধরা যাচ্ছে আপনার পুকুরে কিছু পরিমাণ মাছ রয়েছে এর জন্য আপনি পরীক্ষামূলক ভাবে
মাছের খাদ্য তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। সরিষার খৈল ৩ কেজি, চালের গুড়া ২কেজি,
ভুট্টা ভাঙ্গা ২ কেজি, গমের ভুসি ২ কেজি, শুটকি মাছের গুড়া কিছু পরিমাণ, গোবর
এবং ডিম ডালের ব্যাসন ব্যবহার করতে পারেন। এই সকল উপাদানগুলো একসঙ্গে মিশ্রিত করে
আপনি কিছু পরিমাণ পানিতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি
বর্তমানে মাছ চাষে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছে আর প্রাচীনকালের ভাবনা তারা ভাবছে অনেকেই
রয়েছে মনে করেন গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরির কথা ভেবে থাকেন। পাশাপাশি অনেক
কৃষক রয়েছে শুধুমাত্র পুকুরে গোবর বা জৈব সার ব্যবহার করছে এর ফলে পুকুর গ্যাস
হচ্ছে পাশাপাশি অ্যামোনিয়া গ্যাসের সমস্যা হয়ে আসছে। এইভাবে শুধুমাত্র গোবর
ব্যবহার করলে মাছের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মাছের মুখের আশেপাশে ক্ষত রোগ
দেখতে পাওয়া যায়।
তবে একটি কথা মনে রাখবেন গোবর কিন্তু মাছের খাদ্য তবে এটি ব্যবহারের কিছু
নীতিমালা রয়েছে। এ সকল নীতিমালা গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে না হলে ঘটতে পারে
বিপদ। একটি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন কারো কথায় কখনো শুধুমাত্র গোবর উপরে ব্যবহার
করবেন না। আপনি যদি গোবর ব্যবহার করতে চান অবশ্যই খাদ্য সঙ্গে মিশ্রিত করে অল্প
পরিমাণ দিতে পারেন।
আপনি যদি বাসায় খাদ্য তৈরি করে থাকেন যেমন- সরিষার খৈল, চালের গুড়া, ধানের
ভুসি, গমের ভুসি ইত্যাদি। এরকম খাদ্য আপনি বাসায় তৈরি করেন তাহলে এর সঙ্গে আপনি
গোবর মিশিয়ে মাছকে খাওয়াতে পারেন। তবে আরও একটি বিষয় মাথায় রাখবেন গোবর
খাদ্যটি সবসময় খাওয়াবেন না। শীতকা,বৃষ্টির সময়, এসব খাদ্য ব্যবহার মোটেই করা
ঠিক নয়।
মাছের প্রাকৃতিক খাবার তৈরির পদ্ধতি
আপনি মাছ বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করবেন। মাছের
প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রোথের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। মাছের পোনা ছাড়বার ১৫
দিন পরেই গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি এসব খাদ্যগুলো পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে
হবে। প্রাকৃতিক খাদ্য দেওয়ার একটি কারণ মাছ প্রাকৃতিক খাদ্য পেলে দ্রুত বড় হয়
এর জন্যই প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করলে পুকুরে গ্যাস তৈরি থেকে বিরত রাখে। পুকুরের
পরিবেশ এবং পানির পরিবেশ ভালো রাখতে সক্ষম হয়। এতে অ্যাক্সিডেন্ট পূরণ করতে
পারে। পুকুরে প্রাকৃতিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। আপনি রাসায়নিক সার
ব্যবহার করতে পারেন এবং সপ্তাহে যে পরিমাণ সার ব্যবহার করবেন শতকে জানুন।
- ইউরিয়াঃ ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম
- পটাশঃ ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম
- টিএসপিঃ ১০ থেকে ২০ গ্রাম
মাছের ভাসমান খাবারের দাম
বর্তমানে ভাসমান খাদ্য প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে এর জন্য মাছ চাষীরা মুখ ফিরিয়ে
নিচ্ছেন। গত ২২ সালের পর থেকেই খাবারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। এবং
পণ্যের দাম প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে এর জন্য মাছ চাষীরা লোকসান হচ্ছেন এর ফলে মাছ
চাষীরা মাছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। অনেকে রয়েছেন ডিলারশিপে ভাসমান খাদ্য কিনে
থাকে। তবে ডিলারদেরকে বস্তা পতি ৩থেকে ৩শত টাকা বেশি দিয়ে কিনতেন এর ফলে কিছু
কিছু চাষীরা একদম পথে বসে গেছে।
২০২১ সালে খাদ্যের দাম ছিল ২৫ কেজির বস্তা ৮০০ টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ১,২০০
টাকা। এবং চাষিরা বলছেন আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এর জন্যই তারা মৎস্য চাষ
থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে ঘাটতি হচ্ছে।
তেলাপিয়া মাছ কোন স্তরের খাবার খায়
মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তা হল ভালো মানের খাদ্য। আপনি
যদি মৎস্য চাষে ভালোমতো খাদ্য না ব্যবহার করেন তাহলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে না
এবং নানা ধরনের অসুখ জটিলতা করতে পারেন। তেলাপিয়া মাছ যে সকল খাদ্যগুলো বেশি
পছন্দ করে থাকে এবং এর জন্য দ্রুত তেলাপিয়া মাছ বৃদ্ধি হয় তেলাপিয়া মাছ কোন
স্তরের খাবার খায় জেনে নিন। এবং তেলাপিয়ার খাদ্যের জন্য ডুবন্ত খাবার তৈরি করুন
বা ভাসমান খাবার তৈরি পদ্ধতি জেনে নিন।
ডুবন্ত খাবার তৈরীর পদ্ধতিঃ প্রতি ৫০ কেজি খাবারের জন্য নিচে হিসাব করা
হলো।
- সোয়ামিল-১৩%
- সরিষার খৈল-৫%
- ফিসমিল-১৩%
- চিটাগুড়া-৫০০ গ্রাম
- রাইস ব্রান-১৫%
- ভিটামিন প্রিমিক্স-৩০০ গ্রাম
- এংকার ডালের বেসন-৫%
- লবণ-৬০০ গ্রাম
ভাসমান খাবার তৈরি পদ্ধতিঃ প্রতি ৫০ কেজি খাবারের জন্য নিচে হিসাব করা হলো।
- সোয়ামিল আটা-২৫%
- ডালের বেসন-২৫%
- রাইস ব্রান-১০%
ভাসমান খাবার তৈরির জন্য অবশ্যই খাবারগুলো আটা জাতীয় হতে হবে এর জন্যই খাবার
গুলো ভেসে থাকবে এবং মাছ খুব সহজেই খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে। এবং মাছের জন্য খুব
উপকারী খাদ্য হবে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আশা করছি আপনাদেরকে মাছের ভাসমান খাবার তৈরির উপকরণ মাছের খাবার
তৈরি উপকরণ এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। আপনি এসব ফর্মুলা গুলো
ব্যবহার করে মাছ চাষ করতে পারেন এতে আপনার খুব কম খরচেই মাছের খাদ্য তৈরি করা
সম্ভব এমনকি মাছের গ্রোথের জন্য ভালো হবে পাশাপাশি আপনিও মাছ চাষে লাভবান হবেন। এ
পোস্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই প্রিয় চাষীদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url